পেকিন হাঁস বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ নারীদের ভাগ্য
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০১-০২-২০২৫ ০৫:১২:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০১-০২-২০২৫ ০৫:১২:০৮ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
নওগাঁয় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চীনের বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামীণ গৃহবধূদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ এই পেকিন হাঁস। জেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক পেকিন হাঁসের পারিবারিক খামার। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে গৃহবধূরা বাড়ির উঠানে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কেউ মাচায় আবার কেউ খাঁচায় গড়ে তুলেছেন পারিবারিক খামার। এই দ্রুত বর্ধনশীল হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার শতাধিক গৃহবধূ।
এই জাতের হাঁস দেখতে আকর্ষণীয় এবং অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি হাঁস আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হয়।
আর জেলার নারীদের এই হাঁস পালনে সহায়তা করছে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা “মৌসুমী”। সংস্থাটির প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুর হোসেন জানান, পেকিন হাঁসের পালনের জন্য মাচা পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পিকেএসএফ-এর অর্থায়নে এবং কারিগরি সহায়তায় জেলার নওগাঁ সদর ও বদলগাছি উপজেলায় একশত গ্রামীণ গৃহবধূদের মাঝে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস বিতরণ করে মৌসুমী । তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের একডালা গ্রামে বাসন্তী সমিতির আওতায় দশটি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে পেকিন হাঁস, মাচার উপকরণ, খাবার এবং ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
ডা. নুর হোসেন বলেন, “এই উদ্যোগের ফলে একডালা গ্রামে ক্লাস্টার ভিত্তিক পেকিন হাঁস পালনের খামার গড়ে উঠেছে। খামারিদের উৎপাদিত হাঁসের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে পাইকার, ফড়িয়া এবং স্থানীয় বাজারে হাঁস বিক্রেতাদের সাথে খামারিদের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পিকেএসএফ এর কৃষি ইউনিটভুক্ত প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় ২৫ জন নারীকে পেকিন হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, ১০০টি পেকিন হাঁস পালন করতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিটি খামারি হাঁস বিক্রি করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। একডালা গ্রামের মানুষ বিশেষ করে নারীরা পেকিন হাঁস পালন তাদের জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করার সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়তই অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে পেকিন হাঁস পালনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সদর উপজেলার একডালা গ্রামের শেফালী বেগম জানান সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পেকিন হাঁস পালন করে তিনি অনেক লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে তিনি প্রতিটি পেকিন হাঁস ৩শত থেকে ৪শত টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। এতে করে সংসারের টুকিটাকি খরচের জন্য এবং সন্তানদের পড়ালেখার বাড়তি খরচের টাকা স্বামীর কাছ থেকে নিতে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, “পেকিন হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি এবং সংসারের অনেক অভাবও দূর হয়েছে।” আগামীতে তিনি আরও বেশি করে পেকিন হাঁস পালন করবেন বলেও জানান।
সদর উপজেলার শৈলগাছী গ্রামের ঝর্ণা বেগম বলেন, “সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে পেকিং হাঁস পালন করে মাসে ৪ থেকে ৫ হাঁজার টাকা আয় করতে পারছি।”
বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের জরিনা বেগম বলেন, “আগে দেশি হাঁস পালন করতাম এখন পেঁকিং হাঁস পালন করে ২ থেকে ৩ গুণ লাভ হচ্ছে। সংসারে আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে।”
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’ ভূমিকা রেখে চলেছে। নওগাঁয় বিদেশী দ্রুত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে গ্রামের গৃহবধূদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আমরা এমন কর্মকাণ্ডকে শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ গৃহবধূদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি।”
দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।
বাংলা স্কুপ/প্রতিনিধি/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স